Monday 23 October 2017

--:বিশ্ব জুড়ে ফ্রি WiFi পরিষেবা দেবে ফেসবুক ড্রোন:--




বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীমইন্টারনেট মানে তো শুধু ইমেল পাঠানো বা ফেসবুকে কিছুপোস্ট করা নয়ইন্টারনেট মানে হল তথ্যের অধিকার এবংমত প্রকাশের স্বাধীনতা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যেমনদেশবিদেশের প্রতি মুহূর্তের বিভিন্ন খবর জানতে পারি,তেমনি সেই সম্পর্কে নিজেদের মতামত জানাতে পারিঅনলাইন ফোরামেগড়ে তুলতে পারি জনমত শুধু তাইনয়ইন্টারনেট শিক্ষা  অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকানিয়েছে বিশ্ব জুড়ে এখন অনলাইনে হাজার হাজার কোটিটাকার ব্যবসা হয় অনলাইনে এক দেশের শিক্ষকরা অন্যদেশের ছাত্রদের পড়ান। 
নোটতৈরি সহ পড়াশোনার বিভিন্নক্ষেত্রে এখন ইন্টারনেটের সাহায্য নেয় নাএমন ছাত্রের সংখ্যা হাতে গোনা যাবে 
জনসংযোগেও ইন্টারনেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানেবিভিন্ন কোম্পানি যেমন তাদের পণ্য প্রচারে ইন্টারনেটকেব্যবহার করেতেমনি রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের প্রচারেইন্টারনেটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী,মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত স্তরের নেতামন্ত্রী,অভিনেতাখেলোয়াড়দের ফেসবুকট্যুইটার ইত্যাদিঅ্যাকাউন্ট রয়েছে
কিন্তু ইন্টারনেটের এই সুফল মানুষ তখনই পাবে,যখন সে ইন্টারনেট পরিষেবা পাবে এটা ঘটনা যেজিওপরবর্তী যুগে ভারতে ডেটা প্যাকের খরচ অনেক কমেছেতাই এমন অনেকে এখন ইন্টারনেট পরিসেবা পাচ্ছেন, যাঁরাএতদিন এই পরিসেবা থেকে অর্থনৈতিক কারণে বঞ্চিতছিলেন কিন্তু শুধু ডেটা প্যাকের খরচ কমালেই যেইন্টারনেট সবাই ব্যবহার করতে পারবেতা নয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট পরিসেবা দিতে হলে বিশেষপ্রযুক্তিগত পরিকাঠামো প্রয়োজন ভারতআফ্রিকা সহতৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে এখনো এমন বহু এলাকা রয়েছেযেখানে ইন্টারনেট পৌঁছায়নি এই প্রসঙ্গে পাঠকদের একটাতথ্য জানিয়ে রাখি সেটা হলবর্তমান বিশ্বে ২৭০ কোটিমানুষ ইন্টারনেট পরিসেবা পান, কিন্তু এ সংখ্যাটা বিশ্বেরমোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ বিশ্বের যত মানুষ ইন্টারনেট পরিষেবা পান, তার দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ এখনোএই পরিষেবার বাইরে। এই তথ্যটি ফেসবুক কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তথা চেয়ারম্যান মার্ক জুকারবার্গকে ভাবিয়েছিল কিনা বলতে পারবো না, তবে বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত ও দুর্গম এলাকায় বিশেষ WiFi প্রযুক্তির সাহায্যেনিখরচায় ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে এক বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে ফেসবুক কোম্পানি। ফেসবুক কোম্পানির এইসিদ্ধান্তের পেছনে মানবকল্যাণের উদ্দেশ্য কতটা তা বলাসম্ভব নয়তবে এটা ঘটনা যেযত বেশি সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট অ্যাকসেস করবেফেসবুক অ্যাকাউন্টহোল্ডারদের সংখ্যাও তত বাড়বে

⇒ ফেসবুকের পরিকল্পনাটি কী?

ফেসবুকের এই পরিকল্পনাকে বলা হচ্ছে WiFi Drone Project কয়েক বছর আগে গুগল তাদের লুন বেলুনস্ প্রজেক্টের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে WiFi জোনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২০ কিমি উপর দিয়ে একাধিক বেলুন ভেসে বেড়াবে যেগুলি WiFi হটস্পট হিসাবে কাজ করবে এবং গোটা বিশ্বকে ফ্রি WiFi জোনের আওতায় আনবে। ফেসুবকের উদ্দেশ্যটাও এক, কিন্তু কার্যপদ্ধতি আলাদা। এক্ষেত্রে বেলুনের বদলে ফেসবুক ব্যবহার করবে ড্রোন।

⇒ ড্রোন কাকে বলে?


ড্রোন হল অ্যানম্যানড্ এরিয়াল ভেহিকেল, যা সংক্ষেপে ইউএভি নামে পরিচিত। ড্রোনকে পাইলট ছাড়াই রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের অনেক উপর দিয়ে নির্দিষ্ট পথে উড়ানো সম্ভব। ড্রোনের নাম সাধারণ মানুষ প্রথম জেনেছিল আফগানিস্তানে তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর যুদ্ধের সময়। আফগানিস্তানে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের ডেরা খুঁজে সেখানেক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করতে মার্কিন সেনারা ড্রোন ব্যবহার করতো। এই অভিযানে ড্রোন অত্যন্ত সফল ভাবে তার ভূমিকা পালন করেছিল। প্রচুর জঙ্গি ড্রোন হামলায় মারা গিয়েছিল। এবার যুদ্ধক্ষেত্রে সফল ড্রোনকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে চাইছে ফেসবুক।

⇒ কীভাবে ড্রোন ভূপৃষ্ঠে WiFi সিগন্যাল পাঠাবে?


ফেসবুক যে ড্রোনগুলি আকাশে পাঠাবে, সেগুলির আয়তন জাম্বো জেট বোয়িং ৭৪৭ — এর সমান। একটি বোয়িং ৭৪৭ কত বড়? একটা তথ্য দিলেই পাঠকদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। একটি বোয়িং ৭৪৭ — এর প্রতিটি ডানায় চারটি বড় ফ্ল্যাট (প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন যদি ১৩৭৫ স্কোয়ার ফিট হয়অনায়াসে এঁটে যাবে। তবে আয়তনে বোয়িং ৭৪৭ — এর সমান হলেও ওজনে ফেসবুকের ড্রোনগুলি অনেকটাই হালকা হবে। ড্রোনগুলি ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৬৫ হাজার ফিট উপর দিয়ে উড়বে। ওই উচ্চতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ বায়ুমণ্ডলের ওই স্তরে বাতাসের বেগ খুবই কম এবং সেখান দিয়ে বিমান যাতায়াত করে না। ড্রোনগুলিতে থাকবে সোলার প্যানেল, অর্থাৎ ড্রোনগুলি সৌরশক্তির সাহায্যে চলবে। ড্রোনগুলি WiFi হটস্পট হিসাবেকাজ করবে এবং সেগুলি থেকে যে WiFi সিগন্যাল পাঠানো হবে, তা ফ্রি স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশন (FSO) প্রযুক্তিতে ভূপৃষ্ঠ থেকে অ্যাকসেস করা যাবে তবে FSOপ্রযুক্তিকে কাজ করানোর জন্য ব্যবহৃত হবে লো—অরবিট জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট এবং ইনফ্রারেড লেজার বিম।
WiFi Drone Project যেহেতু অনেক বড়মাপেরএকটি প্রকল্প, তাই এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে ফেসবুকের সঙ্গে রয়েছে নোকিয়া, কোয়ালকম, মিডিয়াটেক, স্যামসাঙ এবং এরিকসন কোম্পানি। এছাড়া এই প্রকল্পের জন্য বিশেষ ড্রোন তৈরি করার জন্য ফেসবুক কোম্পানি ইতিমধ্যে ২০.মিলিয়ন (এক মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) ডলার দিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যাসেন্টা কিনেছে।

No comments:

Post a Comment